বাংলাদেশ বিশ্বের ৪র্থ চাল উৎপাদনকারী দেশ। স্বাধীনতার পর দেশে যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হতো, এখন তার চেয়ে তিনগুণ বেশি। আবার মোট উৎপাদিত চালের ৫৫ ভাগই আসে বোরো ধান থেকে। বাকিটা আসে আউশ ও আমন থেকে। বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে এক বছরে একই জমিতে তিনবার ধান উৎপাদন করা সম্ভব। এই চালই দারিদ্র্য নিরসনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। কৃষি প্রবৃদ্ধি অন্য যে কোন সেক্টরের চেয়ে দারিদ্র্র্য নিরসনে তিনগুণ বেশি ভূমিকা রাখছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) এক কর্মশালায় এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. আখতার আহমদ এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ক্ষুধা ও অপুষ্টি দূরীকরণ: টেকসই সমাধান দেখা যাচ্ছে কি শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে চালের অবদান ও জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান তুলে ধরেন।
সেমিনারে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতাভার গ্রহণ করে তখন দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল ৪০ লাখ টন। ২০০১ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ে তখন খাদ্য উদ্বৃত্ত ছিল ২৬ লাখ টন। আবার যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসে তখন আবার খাদ্য ঘাটতি ছিল ১৬ লাখ টন। আজ আমরা দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। যদিও এ বছর অকাল বন্যায় হাওড়সহ অন্যান্য এলাকায় ২০ লাখ টন ফসল নষ্ট হয়েছে। কিন্তু দেশে কোন খাদ্য সঙ্কট এই মুহূর্তে নেই।
কামরুল ইসলাম বলেন, কৃষি উৎপাদন এখনও মূলত চাল উৎপাদনভিত্তিক। চাল অন্যান্য ফসলের মতো লাভজনক না হলেও কৃষক চালের ওপর অধিক আস্থা রাখে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি আধুনিক খাদ্য মজুদ প্রকল্প সুবিধা নামে একটি সাইলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছে। পাঁচ বছরের এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে ৫ লাখ পরিবারের কাছে যে কোন দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের জন্য ৩০ কেজি পর্যন্ত খাদ্য সংরক্ষণ করার সক্ষমতা নিশ্চিত করা ।
তিনি বলেন, দেশে হতদরিদ্রের সংখ্যা শতকরা ১২ আর সাধারণ দারিদ্র্যের সংখ্যা ২৫ ভাগ। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের আয় বেড়েছে অনেক। এখন একজন মজুর একদিন কাজ করে যা আয় করে, তা দিয়ে সে কমপক্ষে ১০ কেজি চাল কিনতে পারে। কিন্তু ভোক্তা ও উৎপাদনকারীর স্বার্থও বজায় রাখা উচিত।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আগে বাংলাদেশ সাহায্যের জন্য হাত পাতত এখন অন্যকে সাহায্য করার জন্য হাত প্রসারিত করে দেয়। বাংলাদেশের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও নেপালে ২০ হাজার টন চাল ত্রাণ হিসেবে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়ে ভরণপোষণ করছে। যেভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে।
দারিদ্র্য নিরসন ও অপুষ্টি সম্পর্কে চুমকি বলেন, বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে কম সময়ের মধ্যে শিশু, কিশোরী ও নারীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি লাভ করেছে। আমরা কম ওজনের শিশুদের বিষয়ে, ক্ষুধা অপুষ্টি, শিক্ষা ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার, নিরাপদ পানীয় জল সুবিধা, স্যানিটেশন সুবিধাসহ এমডিজি লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে পেরেছি।
তিনি স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, পুষ্টি সংবেদনশীল সামাজিক সুরক্ষা, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক কিছু মতামত ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
ওয়ার্কশপে ইউএসএইড মিশন ডিরেক্টর জেনিনা জারুজেলস্কি, আইএফপিআরআই ডিরেক্টর জেনারেল ড. শেনগেন ফেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়াও সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের ড. ওয়াসি কবির, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুকসানা কাদের, ড. পুর্ণিমা মেনন, সালাউদ্দিন তাওসিফ, অধ্যাপক আব্দুল বায়েস, ড. মেরি রুয়েল, নুসরাত জায়তুন হোসেন, যুুগ্ম সচিব রুহুল আমিন তালুকদার তাদের নিজস্ব বক্তব্য উপস্থাপন করেন।